রবিবার, মে ২৫, ২০২৫
No menu items!
বাড়িজাতীয়আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুলের জন্মজয়ন্তী

আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুলের জন্মজয়ন্তী

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মজয়ন্তী আজ। বাংলা সাহিত্যের আকাশে তিনি ধ্রুবতারা। তার কবিতা, গান, উপন্যাস ও গল্পে বাঙালি জেনেছে বীরত্বের ভাষা, দ্রোহের মন্ত্র। বাঙালির সব আবেগ, অনুভূতিতে জড়িয়ে আছেন চিরবিদ্রোহী এ কবি।যার কাছে বাঙালির অশেষ ঋণ। যার প্রগতিশীল প্রণোদনায় বাঙালি প্রেম আর দ্রোহের ভাষা খুঁজে পেয়েছে, উদ্বুদ্ধ হয়েছে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে। বর্ণাঢ্য আয়োজনে কবির জন্মজয়ন্তী উদযাপন করবে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কর্মী সংঘ। আজ সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে শুরু হবে সংগঠনটির দুই দিনব্যাপী নজরুল উৎসব।

রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর প্রথম বারের মতো জন্মজয়ন্তীর এ আয়োজন নিঃসন্দেহে গৌরবময়। ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান: কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার’ প্রতিপাদ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় এবং কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আজ থেকে তিন দিনের আয়োজনের মধ্য দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে প্রিয় কবিকে।
বড্ড পরাধীন সময়ে ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব ঘটেছিল নজরুলের। সেই কবেকার কথা! অথচ এই এখনো বিস্ময়কর আলো হয়ে পথ দেখিয়ে চলেছেন বাঙালিকে। বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে আজ সারা দেশে উদযাপিত হবে জাতীয় কবির জন্মদিন। দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান, পড়ালেখা শুরু করেন মক্তবে। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর দারিদ্র্যের কারণে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশি দূর এগোয়নি। মাত্র ১০ বছর বয়সেই গোটা পরিবারের ভার কাঁধে নিতে হয় তাকে। জীবিকার প্রয়োজনে রুটির দোকানে কাজ নেন। মসজিদের মুয়াজ্জিন, মাজারের খাদেম হিসেবেও কাজ করেছেন। তরুণ বয়সে সেনা সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছেন যুদ্ধে। সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। করেছেন রাজনীতি। সাহিত্য চর্চার শুরুটাও বালক বয়সে। লেটো দলে যোগ দিয়ে শুরু হয় তার সাহিত্যচর্চা। নজরুলের কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যকে দিয়েছে বিপুল সমৃদ্ধি।
কবি বিশেষ আলোড়ন তোলেন তার ‘বিদ্রোহী’ কবিতা লিখে। শোষকের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে তিনি বলেন— আমি ত্রাস সঞ্চারী ভুবনে সহসা সঞ্চারী ভূমিকম্প।/ ধরি বাসুকির ফণা জাপটি,/ ধরি স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলের আগুনের পাখা শাপটি!/ আমি দেব-শিশু, আমি চঞ্চল,/ আমি ধৃষ্ট, আমি দাঁত দিয়া ছিঁড়ি বিশ্বমায়ের অঞ্চল। কাছাকাছি সময়ে রচিত তার আরেকটি বিখ্যাত কবিতা ‘কামাল পাশা’। এতে ভারতীয় মুসলিমদের খিলাফত আন্দোলনের অসারতা সম্বন্ধে তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমকালীন আন্তর্জাতিক ইতিহাস-চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়। তবে নজরুলের সৃষ্টির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে আছে সংগীত। বৈচিত্র্যময় বাংলা গানের সবচেয়ে বড় ভাণ্ডার তার। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার গান রচনা করেন তিনি। সুরবৈচিত্র্যে ভরপুর এসব গান বাংলা সংগীতকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে। তার সৃষ্ট রাগগুলোও মানুষের মনে দারুণ বিস্ময় জাগায়। কাজী নজরুল ইসলাম নিজের সব সৃষ্টির মধ্য দিয়ে প্রেমের কথা বলেছেন। মানবতার কথা বলেছেন। সাম্যের কবি সমাজের নীচু শ্রেণির মানুষকেও কাছে টেনে নিয়েছেন। নারীর প্রতি উপেক্ষা মেনে নেননি। ধার্মিক মুসলিম সমাজ ও অবহেলিত জনগণের সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ক থাকলেও সাম্প্রদায়িকতার নিন্দা করেছেন তীব্র ভাষায়। স্বার্থান্ধ মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার ছিলেন কবি। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী কবি তৎকালীন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কারণে অসংখ্যবার জেল খেটেছেন। জেলে বসেই তিনি লিখেছেন বিখ্যাত ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’। ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এভাবেই দুর্দম গতিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি। হয়ে উঠেছেন আজকের আমাদের নজরুল। গণমানুষের নজরুল। তবে জীবনের বড় অংশ জুড়ে ছিল নানা লাঞ্ছনা আর গঞ্জনা। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪২ সালে অগ্রজ রবীন্দ্রনাথের ‘ট্র্যাজেডি’র আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণ করেন। এ বছর চির বিদ্রোহী রণক্লান্ত নজরুল বাকশক্তি ও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে শিশুর মতো হয়ে যান। এ অবস্থায় ১৯৭২ সালে রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারত থেকে কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। নজরুলকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেন। কবির জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে পিজি হাসপাতালে। দীর্ঘ রোগ ভোগের পর এখানেই ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট পৃথিবীকে চিরবিদায় জানান তিনি। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়।
জাতীয় কবির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দ্রোহ ও মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। কবি নজরুল এমন এক সময়ে জন্মগ্রহণ করেন, যখন গোটা উপমহাদেশ ছিল পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ। কবির বিদ্রোহী সত্তা অন্যায় আর অবিচারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে; ক্ষুরধার লেখনীতে ভাঙতে চায় অত্যাচারীর শৃঙ্খল।
কর্মসূচি : জাতীয় পর্যায়ে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপনে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় কুমিল্লা ও ঢাকাসহ দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালা। আজ বিকাল ৩টায় কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এই আয়োজনের উদ্বোধনীতে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। অনুষ্ঠানে ‘নজরুল পুরস্কার ২০২৩২০২৪’-এর জন্য মনোনীত গুণিজনদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। আলোচনা, নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটকসহ নানা আয়োজনে সাজানো থাকবে তিন দিনের এই আয়োজন। এছাড়া ময়মনসিংহের ত্রিশালে তিন দিন ও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বাংলা একাডেমি। এদিন সকালে জাতীয় কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে। পরে বিকাল ৪টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে নজরুল বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। দুই দিনের উৎসবের আয়োজন করেছে ছায়ানট। আজ সন্ধ্যায় শুরু হবে এই আসর। দুই দিনব্যাপী এই উৎসবে থাকছে একক ও সম্মেলন গান, নৃত্য, পাঠ-আবৃত্তি।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ