রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আবারও অবনতি হয়েছে। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার সর্বশেষ চিকিৎসা আপডেটে এ তথ্য জানিয়েছে তার জন্য গঠিত দেশি–বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বিত মেডিকেল বোর্ড।
মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে সই করেছেন এভারকেয়ার হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. শাহাবউদ্দিন তালুকদার। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এই বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠান।
দীর্ঘদিন ধরে লিভার, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসসহ বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী জটিলতায় ভুগছেন খালেদা জিয়া। গত মাসের শেষ দিকে বাসায় অবস্থানকালে তার শ্বাসকষ্ট, কাশি ও জ্বর বৃদ্ধি পাওয়ায় ২৩ নভেম্বর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তি হওয়ার পর পরীক্ষা–নিরীক্ষায় ফুসফুস, হৃদযন্ত্র ও কিডনিতে তীব্র অবনতি দেখা দিলে দ্রুত তাকে কেবিন থেকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়।
মেডিকেল বোর্ডের সর্বশেষ তথ্যে বলা হয়, শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া এবং শরীরে কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধি পাওয়ায় শুরুতে তাকে হাই–ফ্লো নাজাল ক্যানোলা ও বাইপ্যাপ মেশিনে রাখা হয়েছিল। তবে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ফুসফুসসহ অন্যান্য অঙ্গকে বিশ্রাম দিতে ‘ইলেক্টিভ ভেন্টিলেটর সাপোর্টে’ নেওয়া হয়।
গত ২৭ নভেম্বর খালেদা জিয়ার একিউট প্যানক্রিয়েটাইটিস ধরা পড়ে, যার চিকিৎসা চলছে। একই সঙ্গে শরীরে গুরুতর ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাল সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ায় তাকে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।
চিকিৎসকরা জানান, কিডনির কার্যক্ষমতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার ডায়ালাইসিস শুরু করা হয়েছে এবং এখনো নিয়মিত ডায়ালাইসিস দিতে হচ্ছে। পাশাপাশি পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ ও ডিআইসি জটিলতার কারণে প্রয়োজন হচ্ছে রক্তসহ বিভিন্ন রক্ত উপাদান ট্রান্সফিউশন।
এ ছাড়া নিয়মিত ইকোকার্ডিওগ্রামে অ্যাওর্টিক ভাল্ভে সমস্যা ধরা পড়লে ‘টিইই’ পরীক্ষায় ইনফেকটিভ অ্যানডোকার্ডাইটিস নিশ্চিত হওয়ায় সে অনুযায়ী আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন শাখার বিশেষজ্ঞ নিয়ে গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল টিম প্রতিদিন তার শারীরিক অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। চিকিৎসকরা গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন—ভুল বা যাচাইবিহীন তথ্য না ছড়াতে, মেডিকেল বোর্ডের প্রতি আস্থা রাখতে এবং রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সম্মান করতে।
