দেশের অন্যতম শীর্ষ আলু উৎপাদন জেলা মুন্সীগঞ্জে আলুর দরপতনে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। স্থানীয় হিমাগারে আলুর কেজি প্রতি দর মাত্র ১১ টাকা, অথচ কৃষকদের দাবি অনুযায়ী উৎপাদন থেকে শুরু করে সংরক্ষণ, পরিবহন ও বাছাই খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি আলুর খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৭ টাকা। ফলে পুঁজির কোনো অংশই আর কৃষকের হাতে থাকছে না।
সরকারি হিসাবে, জমিতে কেজি প্রতি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে ১৭ টাকা। এর সাথে যুক্ত হয়েছে হিমাগার ভাড়া ৬ টাকা, বস্তা ও পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ-সব মিলিয়ে ২৭ টাকা কেজি। কিন্তু সেই আলু হিমাগারে বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকায় এবং খুচরা বাজারে ২০ টাকায়। অথচ গত বছর এই সময় আলুর দাম ছিল ৬০ টাকা কেজি, যা থেকে কৃষকরা কিছুটা হলেও লাভ পেয়েছিলেন। এবার দরপতনের কারণে তারা একেবারে পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
আলু ব্যবসায়ী আলী আহাম্মেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘২৭ টাকার আলু ১১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর ভোক্তা অধিকার এসে দাম বেঁধে দিয়েছিল, কিন্তু এবার কেউ আসে না। কোল্ডস্টোরেজ ভাড়া, সার্ভিস খরচ সব মিলে এক কেজি আলুর খরচ ২৭ টাকা হলেও, বাজারদরে তা বিক্রি হচ্ছে ১০-১১ টাকায়। কৃষকরা পুরোপুরি পুঁজি হারিয়ে পক্সগু হয়ে গেছে। এখন তো আলু বিক্রি-ই হচ্ছে না।’
মুক্তার বেপারী নামে এক কৃষক আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘যদি সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে নভেম্বরের মধ্যে নতুন আলু বাজারে চলে আসবে। পুরোনো আলু নদীতে ফেলে দিতে হবে। আমরা চাই, সরকার আলু রফতানি করুক বা ভিজিএফ এর মাধ্যমে বিতরণ করুক, তাহলে কৃষকরা উপকৃত হবে।’
মানিকপুর এলাকার বাসিন্দা ও ভোক্তা ওয়াহিদ সরকার বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিল, কোল্ডস্টোরেজ ভাড়া, জমির চাষ খরচ, শ্রমিক মজুরি, সার ও বীজের দাম বেড়েছে। কিন্তু বাজারদরে সেই খরচও উঠছে না। কৃষক মাঠে মরছে, আর তারা বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জ আলু উৎপাদনে শীর্ষে থাকলেও বাজারজাতকরণে সমস্যা রয়েছে। এ বছর জেলায় ১০ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। বাজারদর কম হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যদি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে সরকারিভাবে আলু অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তাহলে সঠিকভাবে বিতরণ করা সম্ভব হবে এবং কৃষকের ক্ষতি কমবে।
জেলার ৫৮টি হিমাগারে এ বছর ৫ লাখ ৭ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে, যার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫২ হাজার মেট্রিক টন আলু বাজারজাত হয়েছে। বর্তমানে স্থানীয় হিমাগারগুলোতে রয়ে গেছে প্রায় ৪ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন আলু, যা গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।