জাতীয়করণের দাবিতে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। রাজধানীর হাইকোর্টসংলগ্ন কদম ফোয়ারার সামনে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষকদের তীব্র সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ জলকামান ছোড়ে এবং টানা সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায়। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ ও পানির তোড়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
শিক্ষক নেতারা অভিযোগ করেছেন, সরকার তাদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করে বরং আন্দোলন দমনে শক্তি প্রয়োগের পথ বেছে নিয়েছে। পুলিশের হামলায় অনেকে আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন তারা।
সকাল ১০টা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় এক হাজার শিক্ষক জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হন। ‘বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে তারা জাতীয়করণের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
বিকেলে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে পদযাত্রা শুরু করলে কদম ফোয়ারার সামনে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। কয়েক দফা ঠেলাঠেলি ও ধস্তাধস্তির পর পুলিশ জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চারদিকে দৌড়ে পালাতে দেখা যায়।
ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মো. নওশাদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা ন্যায্য দাবি নিয়ে রাজপথে এসেছি। অথচ আমাদের ওপর জলকামান চালানো হলো। এটা শিক্ষকদের প্রতি চরম অপমান।’
সমন্বয়ক মাহবুবা মালা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা অন্যের সন্তানকে শিক্ষা দিই, অথচ আমাদের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। জাতীয়করণ না হওয়ায় পরিবার চালানোই কষ্টকর। এখন আবার পুলিশি দমন-পীড়ন শুরু হলো।’
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি তৎকালীন সরকার সব বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়। তবে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রায় ৫ হাজার বিদ্যালয় সে সময় বাদ পড়ে। ২০১৬ ও ২০১৮ সালে সরকারি পর্যায়ে চিঠি চালাচালিও হয়, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। সর্বশেষ ২০২৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়, তবুও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।