বুধবার, নভেম্বর ৫, ২০২৫
No menu items!
বাড়িজাতীয়ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন আরপিও সংশোধন: বিতর্কে জোটের প্রতীক,...

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন আরপিও সংশোধন: বিতর্কে জোটের প্রতীক, যুক্ত হলো ‘না’ ভোট ও এআই অপরাধ ধারা

 

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার গত সোমবার জারি করেছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী অধ্যাদেশ। এতে প্রায় দেড় দশক পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় পুনরায় যুক্ত করা হয়েছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে। একই সঙ্গে সংযোজন করা হয়েছে ‘না’ ভোটের বিধান, আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং, এআই অপব্যবহারকে নির্বাচনি অপরাধ হিসেবে গণ্য করার ধারা, এবং পলাতক আসামির প্রার্থী হওয়া নিষিদ্ধকরণসহ একগুচ্ছ নতুন নিয়ম।

সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী আদালত ঘোষিত পলাতক বা ফেরারি হলে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন না। একক প্রার্থী থাকলে ব্যালটে থাকবে ‘না’ ভোটের অপশন, আর সমসংখ্যক ভোট পেলে আগের মতো লটারির বদলে পুনঃভোটের সুযোগ রাখা হয়েছে।

আরও একটি বড় পরিবর্তন এসেছে জোটভিত্তিক নির্বাচনে প্রতীক ব্যবহারের ক্ষেত্রে। এবার থেকে কোনো দল জোটে গেলেও প্রার্থীকে নিজের দলীয় প্রতীকেই ভোট করতে হবে—এই বিধান নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিএনপি, জামায়াতসহ কয়েকটি দল ইতোমধ্যেই এই ধারা বাতিলের দাবি জানিয়েছে।

সংশোধিত আরপিওতে মনোনয়ন জামানত বাড়িয়ে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনে ব্যক্তি পর্যায়ে ছয় মাসের দণ্ড ও দেড় লাখ টাকা জরিমানা, দলের ক্ষেত্রে জরিমানার বিধানও যুক্ত হয়েছে। এছাড়া ইসিকে দেওয়া হয়েছে পুরো আসনের ফল বাতিল করার ক্ষমতা।

প্রবাসী, সরকারি চাকরিজীবী ও কারাবন্দিদের জন্য চালু হচ্ছে আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থা। গণমাধ্যমকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ ও ভোট গণনায় উপস্থিতির বিষয়েও স্পষ্ট নির্দেশনা যুক্ত হয়েছে।
আরপিওর ২০ নম্বর অনুচ্ছেদের জোটভুক্ত দলের প্রতীক ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বিএনপি ও জামায়াত এই ধারা বাতিলের দাবি জানিয়েছে এবং এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের আইন উপদেষ্টার কাছে চিঠিও পাঠিয়েছে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি জানিয়েছে, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই এই সংশোধন করা হয়েছে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পরিপন্থী।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্যের এই পরিস্থিতি রাষ্ট্রের জন্য সুখকর নয়। ঐক্য ফিরিয়ে আনা জরুরি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ মনে করেন, “জোটভিত্তিক ভোটে প্রতীক নির্ধারণে প্রার্থীর স্বাধীনতা থাকা উচিত। বড় দলের প্রতীকে নির্ভরতা ছোট দলগুলোর বিকাশে বাধা দেয়।”
নির্বাচন বিশ্লেষক মুনিরা খান বলেন, “বড় দলের ছায়ায় ছোট দলগুলো নিজস্ব পরিচয় হারাচ্ছে। নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করাই ইতিবাচক।”
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংশোধিত আরপিওর ভিত্তিতেই শিগগির দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হবে। তাদের মতে, এই সংশোধনের মধ্য দিয়ে “নির্বাচনি আইন সংস্কারের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।”

Notify of
guest
0 Comments
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ