গাজীপুরের শ্রীপুরে ১০ দফা দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। এ সময় স্থানী এক শিশু সহ আহত হয়েছেন ১০ জন । শ্রমিকদের দাবি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছোড়া টিয়ারশেলে আহত হয়েছেন তারা।
রোববার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে শ্রীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের নয়নপুর এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখানে আরএকে সিরামিক কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করলে এ সংঘর্ষ বাধে। পরে সকাল ৮টার দিকে শ্রমিকরা পুলিশের উপর ইকপাটকেল ছোড়া শুরু করে। সে সময় পুলিশও পাল্টা টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেট ছোড়ে। এতে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
আরএকে সিরামিক কারখানার পাশের স্থানীয় বাসিন্দা মো. লাল মিয়া নামের এক ব্যক্তি দাবি করেন, শ্রমিকদের উপর টিয়ারশেল নিক্ষেপের সময় তারা বাড়ির ভেতর অবস্থান করছিলেন। এ সময় কিছু শ্রমিক তাদের বাড়ির আশপাশ দিয়ে দৌড়ে পালায়। পুলিশ সেখানে এসে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে তার শিশু সন্তান মো. ইসরাফিল ভয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে প্রাথমিক চিকিৎসায় তার শিশু সন্তান স্বাভাবিক হয়।
অপরদিকে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে আর এ কে সিরামিক কারখানার অন্তত ৯ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ওই কারখানার আন্দোলনরত শ্রমিকদের একজন মো. রফিকুল ইসলাম। তবে তিনি তাদের নাম জানাতে পারেননি। রফিকুল আরো বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সাথে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে তারা জানতে পেরেছেন ।
শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শ্রমিকদের সরাতে সেখানে তাদের কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেট নিক্ষেপ করতে হয়েছে। তবে আহত হওয়ার কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।
শ্রমিকদের কয়েকটি সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ইনক্রিমেন্টের টাকা বেতনের সাথে এক সঙ্গে পরিশোধ, শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে শ্রমিক- কর্মচারী নিয়োগ, প্রতি বছর বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী বাড়তি বেতন, আন্দোলন চলাকালীন দিনগুলোকে হাজিরা দেখানো, নতুন ও পুরাতন শ্রমিকদের বেতনকাঠামো সঠিকভাবে প্রণয়ন, সিভিল কর্মীদের সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা হাজিরা, প্রতি মাসে হাজিরা বোনাস ১৫০০ টাকা করা, আন্দোলন করার পর শ্রমিকদের বহিস্কার না করা, বয়স্ক ভাতা সহ পুরাতন সকল সুবিধা চালু করা, কোম্পানির বিভিন্ন পর্যায়ের শ্রমিক – কর্মচারীদের মধ্যে থাকা ভারতীয়দের অপসারণ করতে হবে। এই দাবিগুলো আদায়ে আন্দোলনে নেমেছেন তাঁরা। কারখানার আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, তাদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ইনক্রিমেন্ট সহ অন্যান্য টাকা সময় মত পরিশোধ করছে না কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে কারখানার ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেও কাজ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে তারা রাস্তায় নেমেছিলেন ।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. রাজিব মিয়া বলেন, শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করলে তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে তুলে দেয় পুলিশ। এরপর শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেট নিক্ষেপ করে। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হলেও শ্রমিকরা বিক্ষিপ্তভাবে কারখানার আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছিল।
আর এ কে সিরামিক কারখানার মানব সম্পদ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তারা শ্রমিকদের দাবি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন । এর মধ্যেই শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেছেন। পরবর্তী পরিস্থিতি জানতে বেলা সাড়ে ১১টায় তাকে ফোন দিলে তিনি তা রিসিভ করেননি।
শিল্প পুলিশের গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আল মামুন সিকদার বলেন, শ্রমিকদের নিভৃত করতে ৩৩ রাউন্ড টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেট প্রয়োগ করতে হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবি। তবে তারা (শ্রমিক) অলিতেগলিতে চলে গেছে। মালিক পক্ষের লোকজন এসেছেন। তাদের সাথে শ্রমিকদের প্রতিনিধি ও আমাদের( শিল্প পুলিশ) প্রতিনিধি এবং সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিও সেখানে আছে। তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের দাবির বিষয়টির সিদ্ধান্ত হবে। শ্রীপুর থানা পুলিশ একজনকে আটক করেছে। কেউ আহত হয়নি।