বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা আজ বুধবার বাদ জোহর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা ও এর সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে তাঁর স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হবে।
গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিশেষ আমন্ত্রণে অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফনের সিদ্ধান্ত উপদেষ্টা পরিষদকে অবহিত করেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাসহ সর্বক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান।
সভায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, গভীর শোকের এই সময়ে আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি। পুরো জাতি খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করছিল, যাতে তিনি আমাদের সঙ্গে আরও বহু বছর থাকেন। আমরা তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করি এবং জাতির পক্ষ থেকে তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। জানাজা ও দাফনের ক্ষেত্রে সরকার সর্বাত্মক সহায়তা করবে।
স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, সর্বশেষ গত ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল। সেদিন তিনি অত্যন্ত উৎফুল্ল ছিলেন এবং দীর্ঘক্ষণ কথাবার্তা বলেন। নিজের অসুস্থতার মাঝেও তিনি সবার সুস্থতা নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছিলেন। জাতির এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাঁর চলে যাওয়া অপূরণীয় ক্ষতি।
খালেদা জিয়ার জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়াও সরকারের উপদেষ্টা, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং রাজনৈতিক নেতারা অংশ নেবেন।
জানাজা ও দাফন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বৈঠক
খালেদা জিয়ার জানাজা, দাফন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমন্বয় নিয়ে গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, জানাজা ও দাফন উপলক্ষে ১০ হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। বিএনপির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে।
তিনি আরও জানান, এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে মরদেহ সংসদ ভবনে নেওয়া হবে এবং প্রতিটি ধাপে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে।
নারীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
খালেদা জিয়ার জানাজায় সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে। নারীদের জন্য জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে পৃথক ও নিরাপদ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
তবে জানাজা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকলেও দাফনের সময় কেবল নির্ধারিত ব্যক্তিরাই জিয়ার মাজার এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন। জানাজাস্থলে ভারী বস্তু ও ব্যাগ বহন নিষিদ্ধ থাকবে।
মৃত্যুর পেছনে শেখ হাসিনার দায় রয়েছে: আইন উপদেষ্টা
খালেদা জিয়ার মৃত্যুর পেছনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের দায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে প্রহসনমূলক রায়ে কারাগারে পাঠিয়ে দীর্ঘদিন নির্যাতন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যে মামলায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, তা যে সম্পূর্ণ সাজানো ও প্রহসনমূলক ছিল, তা সর্বোচ্চ আদালতের আপিল ও রিভিউয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
