শুক্রবার, অক্টোবর ১৭, ২০২৫
No menu items!
বাড়িক্যাম্পাসনারীর পোশাক নিয়ে হয়রানি করলে কঠোর ব্যবস্থা

নারীর পোশাক নিয়ে হয়রানি করলে কঠোর ব্যবস্থা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল। নির্বাচনে ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টি পদেই জয়ী হন তারা। এতে সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম।

ডাকসুর পুরোটাই এখন শিবির সমর্থিত প্যানেলের দখলে। ভিপি হওয়ার পর জুলাই আন্দোলনের এই সহযোদ্ধা কীভাবে সামলাবেন পরিস্থিতি, কেমন রাখবেন ক্যাম্পাসের পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের জন্য কী করতে চান, নারীদের পোশাকই বা কেমন হবে, এসব বিষয় নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন সাদিক কায়েম।

ডাকসু নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। বেশ কয়েকটা দিন গেলো, কেমন লাগছে আপনার? অনুভূতি কেমন?এ প্রশ্নের জবাব সাদিক কায়েম বলেন, ভালো লাগছে অবশ্যই। তবে আমরা সবাই জয়ী হয়েছি, যারা জুলাই আন্দোলনে ছিলেন, এটা তাদেরই জয়।

আপনার চোখে নির্বাচনের এই ফলাফলকে কীভাবে দেখছেন?

সাদিক কায়েম: ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে জুলাইয়ের বিজয় হয়েছে। জয় হয়েছে শহীদদের আকাঙ্ক্ষার, জয় হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। এখানে হার-জিতের কোনো প্রশ্ন নেই। আমরা সবাই জুলাইয়ের সহযোদ্ধা ছিলাম এবং অক্লান্তভাবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। আজ আমরা আজাদী অর্জন করেছি। এখন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে চাই, যেখানে গণতান্ত্রিক চর্চা হবে এবং সেই গণতন্ত্রের সুন্দর বার্তা সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে।

 ডাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পেছনে আপনার মূল প্রেরণা কী ছিল?

সাদিক কায়েম: ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রেরণা এসেছে শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষা ও কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরার তাগিদ থেকেই। জুলাই বিপ্লবের পর এক বছর ধরে আমরা শিক্ষার্থীবান্ধব নানা কর্মকাণ্ডে সক্রিয়। শহীদ পরিবারের খোঁজ নেওয়া, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, জুলাইকে সাংস্কৃতিকভাবে প্রাসঙ্গিক করার আয়োজন, সবই ছিল আমাদের দায়িত্ববোধের অংশ। এই নির্বাচনের মূল লক্ষ্য ছিল শহীদদের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা সবার কাছে ছড়িয়ে দেওয়া এবং সেই আলোকে একটি সর্বজনীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা। জুলাইয়ের শহীদরা আমাদের পথ দেখিয়েছেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া, তাদের আস্থা, আমাদের নেতৃত্ব, ব্যক্তিত্ব ও সততার প্রতি তাদের বিশ্বাস, সবকিছুই আমাদের প্রেরণাকে শক্তিশালী করেছে।

 নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক সময় স্বচ্ছতার প্রশ্ন উঠেছে, আপনার অভিজ্ঞতা কেমন বা কী মন্তব্য করতে চান?

সাদিক কায়েম: এই নির্বাচনের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল প্রশংসনীয়। তারা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের নির্বাচনী উচ্ছ্বাস ছিল স্পষ্ট। এই নির্বাচনে প্রকৃতপক্ষে জয়-পরাজয়ের কিছু নেই, সবাই বিজয়ী। আমরা দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়েছি এবং নিজেরাও তা পালন করেছি। শিক্ষার্থীরা যে আস্থা ও রায় আমাদের দিয়েছে, তাকে আমরা সাদরে গ্রহণ করেছি। এখন আমাদের দেওয়া ইশতেহার বাস্তবায়ন করলেই প্রকৃত বিজয় নিশ্চিত হবে।

 ভিপি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ১০০ দিনে আপনার অগ্রাধিকারের তালিকায় কী কী কাজ আছে?

সাদিক কায়েম: আমরা পলিসিভিত্তিক সংস্কারে মনোযোগ দিতে চাই। বহু জায়গায় সিন্ডিকেটভিত্তিক জটিলতা তৈরি হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিকমতো কার্যকর হতে দিচ্ছে না। আমরা সেই সিন্ডিকেট ভেঙে সেগমেন্টভিত্তিক সঠিক পলিসি প্রণয়ন করবো।

শিক্ষার্থীদের মৌলিক সংকট যেমন, পরিবহন সমস্যা, রিডিং রুম সংস্কার, ক্যান্টিনের খাবারের মান উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবার প্রসার, এসব সমাধানে কাজ করবো। নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে ডিজিটাল কমপ্লেইন বক্স স্থাপনও আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে। এরইমধ্যে সাবেক ডাকসু নেতা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। প্রথম ১০০ দিনের মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ও একাডেমিক পরিবেশ নিশ্চিত করা, নারীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা, খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, কো-কারিকুলার কার্যক্রমের সুযোগ এবং পরিবহন সংকট সমাধানে অগ্রাধিকার দেওয়া।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা যে সমস্যা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভোগে (নিরাপত্তা, খাদ্য সমস্যা, সিট সংকট) সেগুলো সমাধানে আপনার পরিকল্পনা কী?

সাদিক কায়েম: নিরাপদ ক্যাম্পাসের জন্য আমরা এরইমধ্যে প্রক্টরিয়াল টিম, প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। খাদ্য সমস্যার সমাধানে ক্যান্টিন মালিক ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ, পুষ্টিবিদের মাধ্যমে খাবারের মান যাচাই এবং পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় পদক্ষেপ নিচ্ছি। আবাসন সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন ভাতা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বাধ্য করবো আমরা। স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি হলে হেলথ ক্যাম্প, মেডিকেল সেন্টারের আধুনিকায়ন এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা হবে। হলের রিডিং রুমগুলো নতুনভাবে সাজানো ও প্রতিটি রুমের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে আমরা ক্যাম্পেইন শুরু করেছি। পাশাপাশি ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা হলগুলোর নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

 ভবিষ্যতে নিজেকে জাতীয় রাজনীতিতে দেখতে চান কি না?

সাদিক কায়েম: ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতই নেবে। শিক্ষার্থীরা আমাকে তাদের ম্যান্ডেট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন। তাদের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা পূরণই আমার প্রথম দায়িত্ব। শিক্ষার্থীবান্ধব স্বপ্নের ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।

শিক্ষার্থীদের জন্য আপনি কেমন ক্যাম্পাস কল্পনা করেন?

সাদিক কায়েম: আমাদের স্বপ্ন এমন একটি ক্যাম্পাস, যেখানে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীও চমৎকার একাডেমিক পরিবেশ পাবে। ক্লাসে সে হবে জুনিয়র স্কলার, আর শিক্ষক হবেন মেধাভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত সিনিয়র স্কলার। গবেষণার পর্যাপ্ত পরিবেশ, আধুনিক লাইব্রেরি, আবাসন সংকটের সমাধান, নিরাপদ খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা-সবকিছুই থাকবে সেখানে।

 সবশেষ প্রশ্ন, নারীদের পোশাক নিয়ে আপনাদের কোনো বিধিনিষেধ আছে?

সাদিক কায়েম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হবে নারীদের জন্য একটি সম্পূর্ণ নিরাপদ পরিবেশ, যেখানে সবাই ন্যায্য অধিকার ভোগ করবে। যিনি হিজাব পরবেন তিনি যে অধিকার পাবেন, যিনি পরবেন না তিনিও সমান অধিকার পাবেন। কেউ কাউকে হয়রানি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কে কোন পোশাক পরলো বা কার কোন আদর্শ সেটা নয়, আমরা সবাই মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ভালো রাখবো। স্বপ্নের ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি, ইনশাআল্লাহ সেটিই বাস্তবায়িত হবে।

Notify of
guest
0 Comments
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ