ইমরুল হাসান বাবু, টাঙ্গাইল:
টাঙ্গাইলে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ ও ফসলের পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। মৌসুমের শুরুতেই আগাম জাতের সবজি বাজারজাত করে অধিক লাভের আশায় নানা প্রস্তুতিতে দিনরাত খেটে চলেছেন তারা।
সাধারণত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে বাজারে শীতকালীন সবজি সরবরাহ শুরু হয়। তবে সে সময় চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ও সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বাজারদর কমে আসে। তাই কৃষকেরা এখন বর্ষার শেষ দিকেই উঁচু জমিতে আগাম জাতের সবজি চাষ শুরু করছেন, যাতে চাহিদা ও মূল্য বেশি থাকা অবস্থায় ফসল বাজারে তুলে বাড়তি মুনাফা অর্জন করা যায়।
সরেজমিনে টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর, ঘাটাইল, সখীপুর, গোপালপুর, ভুয়াপুর, কালিহাতী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগাম শীতকালীন সবজি চাষে মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। শিম, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, করলা, লাউ, লালশাক, পালংশাকসহ নানা জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা।
মধুপুর উপজেলার ব্রাহ্মণবাড়ী (মজিদচালা) গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেন জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে প্রায় ৯ হাজার হাইব্রিড ফুলকপির চারা রোপণ করেছেন। উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করে তাকে পরামর্শ দিচ্ছেন। বিল্লাল বলেন, “আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার ভালো ফলন ও লাভের আশা করছি।”
ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী ইউনিয়নের জোরদিঘী গ্রামের কৃষক আব্দুর জব্বার মিয়া জানান, চার বিঘা জমিতে প্রায় ১৬ হাজার ফুলকপি ও কিছু শিমের চারা রোপণ করেছেন। বর্তমানে নিয়মিত পরিচর্যা চলছে। তিনি আশাবাদী, কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে ফলন ভালোই হবে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, শীতকালীন ফুলকপি চাষের জন্য ভাদ্র-আশ্বিন মাসে (মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য অক্টোবর) বীজ বপন করতে হয় এবং কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে (মধ্য নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর) চারা রোপণ উপযুক্ত। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার ও গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪০ সেন্টিমিটার রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। জমিতে পর্যাপ্ত জৈব সার ছাড়াও প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার (ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, বোরন) ব্যবহার করলে ভালো ফলন হয়।
ফুলকপির কুঁড়ি গঠনের সময় নিয়মিত সেচ, আগাছা পরিষ্কার এবং জমি ঝুরঝুরে রাখার ওপর গুরুত্ব দেন কৃষি কর্মকর্তারা। তাদের মতে, সঠিক পরিচর্যা ও পদ্ধতি অনুসরণ করলে ৬০-৭০ দিনের মধ্যেই ফুলকপি সংগ্রহের উপযোগী হয়ে ওঠে।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আশিক পারভেজ জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে প্রায় ২৭ হাজার ৪৮০ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। কৃষকদের মধ্যে আগাম সবজি চাষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে, কারণ এতে উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম এবং লাভের হার বেশি।
টাঙ্গাইলের কৃষকরা আশাবাদী, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছরের আগাম শীতকালীন সবজি চাষ তাদের মুখে হাসি ফোটাবে এবং বাজারে সবজির সরবরাহও বাড়াবে।